Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয়

প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান
এবার সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হবে কিনা, তা নিয়ে পর্যবেক্ষক মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে। আগামী ৯ ও ১০ নভেম্বর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এটি ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন। এর আগে ২০১৪ সালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সার্ক চার্টারে প্রতি বছর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। তবে প্রতি বছর হতে পারেনি। আগামী ডিসেম্বরে সার্ক ৩১ বছর পার করবে। সে মতে ৩০টি শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা। হয়েছে মাত্র ১৮টি। ভারতের আপত্তি ও অনীহার কারণে প্রতিবছর শীর্ষ সম্মেলন হতে পারেনি। এবারও তার কারণে সম্মেলন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের মধ্যে জোর টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। তারই প্রেক্ষাপটে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগদান থেকে বিরত থাকলে শীর্ষ সম্মেলনটি হবে না। এ ধরনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি সম্মেলনে যোগদান নাও করতে পারেন। সার্কের চার্টার অনুযায়ী, কোনো একটি দেশ যদি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে অপারগতার কথা জানায় তাহলে সম্মেলনের আয়োজন করা যাবে না। শুধু ভারতই নয়, বাংলাদেশও এবার সম্মেলনে যোগ দেবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। কোনো কোনো মহল থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতিশীল পরিস্থিতি এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
নিয়ম মতোই প্রতিবছর সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়া উচিত। কোনো কোনো বছর যে হচ্ছে না, তাতে এই সংস্থার স্বাভাবিক বিকাশ ও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা এ অঞ্চলের বৃহত্তর স্বার্থে কাক্সিক্ষত নয়। এ কথা ওয়াকিহাল মহলের অজানা নেই, সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা বাংলাদেশ। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ ধরনের একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার প্রথম তাগিদ অনুভব করেন। তার সামনে ছিল ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল ও আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক রাষ্ট্রজোট। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলের সাতটি দেশকে নিয়ে কোনো সংস্থা গড়ে তোলার চিন্তা কারও মাথায় আসেনি। তাছাড়া দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক এ জাতীয় সংস্থা গঠনের অনুকূলেও ছিল না। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আন্তরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ ছিল না। নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ এমনিতেই তার প্রভাব বলয়ের মধ্যে ছিল। শ্রীলংকার সঙ্গে চলনসই সম্পর্ক থাকলেও পাকিস্তান ছিল তার আজন্ম বৈরী। বাকি থাকে বাংলাদেশ, যার সঙ্গেও তার সম্পর্ক তখন খুব মসৃণ ছিল না। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের আগ্রহ বা প্রস্তাবে তার খুব একটি সায় থাকার কথা নয়। এই বাস্তবতা জানা থাকার পরও জিয়াউর রহমান উদ্যোগী ভূমিকা নিতে পিছপা হননি। তিনি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা চালান ১৯৭৮ সালের শেষ দিক থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত। তিনি এ অঞ্চলের দেশগুলো সফর করেন। এ ছাড়া ওইসব দেশের নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত চিঠি ও দূত মারফত কাক্সিক্ষত সংস্থা গঠনের বিষয়ে লাগাতার কথাবার্তা চালিয়ে যান। অবশেষে ১৯৮০ সালের মে মাসে তিনি এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাব পেশের পর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ওয়ার্কিং পেপার তৈরি করে অপর ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলন। ওই সম্মেলনে যোগদানকারী দক্ষিণ এশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একসঙ্গে বসে প্রথমবারের মতো সংস্থা গড়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। সে বছরই ৩-মে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হন। পরবর্তীকালে এ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকে এবং অবশেষে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় দক্ষিণ এশীয় সাত দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) আত্মপ্রকাশ ঘটে। অনেক পরে সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে আফগানিস্তান। আগে সাত জাতি হলেও এখন এটি আট জাতি সংস্থা।
সার্ক গঠনের চিন্তার পেছনে নির্দিষ্ট- অনির্দিষ্ট অনেক লক্ষ্য ছিল। প্রথমত, এ অঞ্চলের দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ বা অবিচ্ছিন্ন সূত্রে গ্রথিত করা, যাতে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এর কেন্দ্রীয় লক্ষ্য ছিল, সহযোগিতাভিত্তিক পারষ্পরিক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন সাধন। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নÑ এ ধারনায় প্রতিটি দেশের উন্নয়নও সংযুক্ত ছিল। দ্বিতীয়ত, এ অঞ্চলকে সব দিক দিয়ে নিরাপদ করা। কোনো বহিঃশক্তি যেন এ অঞ্চলের ওপর রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, সদস্যভুক্ত দেশগুলোর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিমুক্ত করা। কোনো সদস্য দেশ যাতে অন্য সদস্য দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা। চতুর্থত, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করা। সার্ক ফোরামেও বিষয়টি আনার সুযোগ রাখা, যাতে সম্মিলিত ইচ্ছা বিরোধের সুরাহায় নিয়ামক ভূমিকা রাখতে পারে।
সার্কের এই প্রধান লক্ষ্যসমূহের প্রতি শুরু থেকেই ভারতের খুব একটা সমর্থন ছিল না। সেটা নানাভাবে এযাবৎ প্রমাণিত হয়েছে। সার্ক বাংলাদেশের ব্রেন চাইল্ড, তা মেনে নেয়া ভারতের পক্ষে কঠিন। কেন কঠিন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যার সুযোগ এখানে নেই। ভারত বরাবরই সম্প্রসারণকামী একটি দেশ। এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফায়দা উঠিয়ে নেয়া তার জাতীয় নীতি প্রদর্শনের অংশ। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই অঞ্চলের ও প্রতিটি দেশের উন্নয়ন তার কতটা কাক্সিক্ষত তা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বিরোধ সার্ক ফোরামে আলোচনার সুচিভুক্ত করার বিষয়টি ভারতের কারণেই গ্রাহ্যতা পায়নি। দেখা গেছে, ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। এর ফলে কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গেই তার দ্বিপক্ষীয় বিরোধের সন্তোষজনক মীমাংসা হয়নি। যেহেতু সুযোগ নেই, তাই আঞ্চলিক ভিত্তিতেও হয়নি। সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘যার সঙ্গে প্রয়োজন তার সঙ্গে সহযোগিতা’ এই নীতিই ভারত অনুসরণ করছে। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী-প্রতিপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ সহযোগিতা অঞ্চলভিত্তিক হলে ওই দেশটিই নয়, অন্যান্য দেশও লাভবান হতে পারত। নজির হিসেবে পানি ও বিদ্যুৎ খাতের কথা উল্লেখ করা যায়। পানি সমস্যা এ অঞ্চলের একটি সাধারণ সমস্যা। এ নিয়ে ভারত আঞ্চলিক উদ্যোগ নিতে মোটেই রাজি নয়। সে নেপাল-ভুটানের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতা ও চুক্তি করছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও এটাই করছে। এ ব্যাপারে বহুপাক্ষিক বা চায়না, নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ নিলে পানি সংকট দূর হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ আঞ্চলিক উদ্যোগের ফলে আগামী অন্তত একশ বছর এ অঞ্চলে পানির কোনো অভাব বা ঘাটতি দেখা দেবে না। তারা আরো মনে করেন, প্রতিবছর যে বিপুল পানিরাশি এ অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে পতিত হয়, তা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হলে কয়েক লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে, যা দিয়ে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে।
ভারত তার একান্ত জাতীয় স্বার্থের বাইরে যেতে একেবারে অনিচ্ছুক। অন্যদিকে যে সম্প্রসারণবাদী নীতি সে লালন করে, তা থেকে একচুল সরে আসতে নারাজ। এমতাবস্থায়, সার্কের মহৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তার কোনো দৃঢ় ইচ্ছা বা অঙ্গীকার থাকার কথা নয়। বস্তুত, তার কারণেই সার্ক যতটা বিকশিত হতে পারত, তা হয়নি। সার্কের অস্তিত্বই এখন অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হতে বসেছে। এভাবে যদি সার্ক শীর্ষ সম্মেলন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতে না পারে, গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি যদি বাস্তবায়িত হতে না পারে তবে হয়তো এমন এক সময় আসতে পারে যখন সার্ক আপনাআপনিই সব দেশের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। সার্কের প্রতি ভারতের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদিকেও লক্ষ্যযোগ্য। সার্ককে সবল-সচল ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভারত কেবল অনীহই নয়, এর উপযোগিতা যাতে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় সে জন্য সে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অতি উৎসাহ প্রদর্শন করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালকে নিয়ে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (বিবিআইএন) গঠনের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ভারত এর উদ্যোক্তা। অন্যদিকে বিমসটেক ও ভারত মহাসাগরভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়ে আরো দুটি জোটের ব্যাপারেও ভারতের বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্যযোগ্য। উল্লেখ করা যেতে পারে, এই দুটি জোটে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ পাকিস্তান নেই। বিবিআইএন-এ যেমন পাকিস্তান নেই তেমনি নেই আফগানিস্তান, মালদ্বীপ কিংবা শ্রীলঙ্কা। সার্কের মধ্যে এ ধরনের উপ-আঞ্চলিক জোট গড়ে উঠলে সঙ্গতকারণে সার্ক দুর্বল ও কালক্রমে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যেতে বাধ্য।
সার্ক ফোরামে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ থাকলে আজকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশের যেসব বিরোধ বা সমস্যা রয়েছে তার সমাধান সহজ হতো এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার কাক্সিক্ষত পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হতো। দ্রুত ব্যাপক সাফল্য চয়ন করা সম্ভব হতো। ভারত এ ক্ষেত্রে রাজি না হয়ে মূলত বিরোধ ও সমস্যাগুলা জিইয়ে রাখার পক্ষেই তার অবস্থান নির্দিষ্ট করেছে। পাকিস্তান ভারতের আজন্ম শত্রু। এই শত্রুতার একটি বড় কারণ কাশ্মীর সমস্যা। এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মধ্যে দুবার যুদ্ধ হয়েছে। প্রথম যুদ্ধ হয়েছে ১৯৪৭-৪৮ সালে এবং দ্বিতীয় যুদ্ধ ১৯৬৫ সালে। দু-দুটি যুদ্ধেও কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়নি। কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ভারত জাতিসংঘে যায়। জাতিসংঘ গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভারত সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সমস্যারও কোনো সমাধান হয়নি। অতি সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এখন যে গণপীড়ন ও মানবাধিকারের বেপরোয়া লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে তার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান প্রতিবাদ জানিয়েছে। এমন কি, বিষয়টি আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে গত আগস্টে সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে গিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং যে আচরণ করেছেন, যে আচরণ করেছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী খান তাতে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বালাই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে মনোমালিন্য মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। রাজনাথ সিং সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই ইসলামাবাদ ত্যাগ করেন। এমনকি তিনি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ডিনারেও অংশ নেননি। অন্যদিকে নিসার আলী খান রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে হাত পর্যন্ত মেলাননি। রাজনাথ সিংহ সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। বিশেষ করে তিনি বলেন, পাকিস্তান কাশ্মীরের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’দের সহযোগিতা করছে। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী খান বলেন, কাশ্মীরের ‘স্বাধীনতাকামী’দের সন্ত্রাসী বলা ঠিক নয়। কাশ্মীরে ভারতের দখলদারিত্বের অভিযোগ এনে তিনি আরো বলেন, যারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করছে, পাকিস্তান তাদের ‘স্বাধীনতাকামী’ বলে মনে করে।
কাশ্মীর প্রশ্নে এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের পাশাপাশি পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রসঙ্গে ভারত বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে সব কথা বলেছেন, তাতে তিক্ততার মাত্রা বেড়েছে। নরেন্দ্র মোদি একাধিকবার বলেছেন, বেলুচিস্তানে পাকিস্তান ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে এবং সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। তার এ বক্তব্যে পাকিস্তান তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে এবং পাল্টা এ কথাও বলেছে, বেলুচিস্তানে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে তাতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর হাত রয়েছে। নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে তা প্রমাণিত হয়েছে।
কাশ্মীর ও বেলুচিস্তান প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ও অভিযোগ ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ওপর যে কালো পর্দা ঝুলিয়ে দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ধারণা করা হচ্ছে, সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি হয়তো যোগদান করবেন না। ভারত ইতোপূর্বে নানা অজুহাতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানে বিরত থেকেছে। এবার তো একটা শক্ত কারণ তৈরি হয়েছে। কাজেই, ভারতের যোগদান না করার জন্য এবার যদি সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সার্ক শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ার পেছনে বাংলাদেশও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও দ- কার্যকর করা নিয়ে পাকিস্তান যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে বাংলাদেশ অতিশয় অসন্তুষ্ট হয়েছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে বাদ-প্রতিবাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি পর্যন্ত জানিয়েছেন। এই পটভূমিতে দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এমত ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানে অপরাগতা প্রকাশ করতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে যে গভীর সখ্য ও সম্পর্ক রয়েছে, তাতে দুই দেশ স্ব স্ব কারণ দেখিয়ে সম্মেলনে যোগদান করা থেকে বিরত থাকলেও কেউ বিস্মিত হবে না।
দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধতা, সংহতি, উন্নয়ন অগ্রগতি ও বিকাশের ক্ষেত্রে সার্ক অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি সংস্থা। ভারতের কারণে কিংবা ভারত-পাকিস্তান বৈরি সম্পর্কের কারণে এই সম্ভাবনা ব্যহত কিংবা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, সেটা কারো কাম্য হতে পারে না। কোনো দেশের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের, বিশেষত, এক প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অন্য প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক সব সময় স্বাভাবিক বা মসৃণ থাকবে, এ রকম মনে করার কারণ নেই। সম্পর্ক কখনো হৃদ্যতাপূর্ণ থাকতে পারে, কখনো হতে পারে তিক্ততাপূর্ণ ও উত্তেজনাকর। সম্ভাবনা বা আশঙ্কার এই দিকটি সামনে রেখেই প্রতিটি দেশের উচিৎ সম্পর্ক সুরক্ষার বিষয়েই জোর দেয়া। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া বা কাজ করা উচিৎ নয়, যাতে বিরোধ বা তিক্ততা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায়। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের এখন যে সম্পর্ক কিংবা বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের যে সম্পর্ক সেটা জিইয়ে রাখা বা বাড়তে দেয়া কোনো দেশের জন্যই কল্যাণজনক নয়। বিশেষ করে, এ কারণে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন না হওয়াটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। পর্যবেক্ষকরা এ কথা শুরু থেকেই বলে আসছেন, সার্ক যদি শক্তিশালী হয়, কার্যকর হয় তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বড় দেশ হিসাবে ভারত। ভারতকে এটা ভালোভাবে বুঝতে ও অনুধাবন করতে হবে। অন্যান্য দেশকেও একইভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। সার্ক তাদের উন্নয়ন ও বিকাশকেই এগিয়ে দেবে। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে এক ধরনের সংরক্ষণও দেবে। বড় দেশ বা তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী দেশ চাইলেই যাচ্ছেতাই করতে পারবে না। তাদের এও স্মরণ রাখতে হবে, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সবার উন্নয়ন তরান্বিত করতে সার্কের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ যেহেতু সার্কের উদগাতা, স্বপ্নদ্রষ্টা সুতরাং সার্ককে শক্তিশালী ও কার্যকর করা বা রাখার ক্ষেত্রে তার একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ এ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের এখনো দু’মাসের মতো বাকি। এর মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সার্কের স্বার্থে, সদস্য দেশগুলোর স্বার্থে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন নির্ধারিত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে, এমন প্রত্যশাই যৌক্তিক ও সঙ্গত। এই প্রত্যাশা পূরণ ভারতের আগ্রহ ও ইচ্ছার ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। এখন দেখা যাক, ভারত কি করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয়
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->